উবুন্টু সাধারনত দুইভাবে ইন্সটল করা হয় – উবি দিয়ে উইন্ডোসের ভেতর ইন্সটল আর আরেকটি আলাদা পার্টিশন করে উবুন্টু ইন্সটল । দূরে বসে নতুন কেউ যদি আমাকে বলেন ” উবুন্টু কিভাবে ইন্সটল করব ? ” আমি তখন ভাবনাহীন উপায় উবি দিয়ে করতে বলে দেই । সাথে এ ও বলি , যদি উবুন্টুতে পুরোপুরি ট্রান্সফার হতে চান তবে ফ্রেশ ইন্সটলই ভালো , আর উবি দিয়ে ইন্সটল করলে ডিস্ক পারফর্ম্যান্সে সামান্য হেরফের হতে পারে । ব্যস! এই “সামান্য হেরফের” কথাটা মনে হয় সব সময় পীড়া দেয় ! তাই চিন্তা করলাম আলাদা পার্টিশন করে উবুন্টু ইন্সটলের একটা টিউটরিয়াল লেখা দরকার । চাচার ল্যাপটপটা সামান্য সময়ের জন্য পেয়ে সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ফেললাম । এই টিউটরিয়ালে অনেক স্ক্রীন-শট ব্যবহার করা হয়েছে – লোড হতে সময় নিতে পারে ।
আমাদের কাজ দুইটা – ১। উবুন্টুর জন্য পার্টিশন করা ।
২। উবুন্টু ইন্সটল করা ।
উবুন্টুর জন্য দুইটা পার্টিশন লাগে , একটা উবুন্টূর ইন্সটলেশন পার্টিশন , আরেকটার নাম সোয়াপ পার্টিশন ( উইন্ডোসের ভার্চুয়াল মেমরির কাজ এখানে করে সোয়াপ , এতে সুবিধা হল আপনি যদি উবুন্টু আর লিনাক্স মিন্ট ইন্সটল দেন তবে তারা দুজনেই ব্যবহার করবে একই সোয়াপ । অন্যদিকে উইন্ডোসের প্রত্যেকটা ইন্সটলেশন আলাদা আলাদা ভার্চুয়াল মেমরি স্পেস ব্যবহার করবে – হার্ডডিস্কের কি নিদারুন অপচয় !)
উবুন্টু ইন্সটলের জন্য সর্বনিম্ন ৫ জিবির একটা পার্টিশন হলেই হয় । তবে কাজের সুবিধার জন্য আমার রিকমেন্ডেশন থাকবে ১০ জিবির ইন্সটলেশন পার্টিশন আর ১ জিবি সোয়াপ ।
আপনি যদি উইন্ডোসে থেকেই পার্টিশন করেন তবে শেষের একটা ড্রাইভ ( ধরুন G: আপনার হার্ডডিস্কের শেষ ড্রাইভ তবে G: কে ভেঙ্গে দুইটা ড্রাইভ বানান – একটা হবে ১০ জিবি , আরেকটা ১ জিবি ।
চলুন কাজ শুরু করি –
- প্রথমে আপনার বায়োস থেকে ফার্স্ট বুট ডিভাইস সিডি/ডিভিডি করে নিন ( করা না থাকলে ) । উবুন্টু সিডি ঢুকিয়ে রিস্টার্ট দিন । সিডি থেকে বুট হবে ।
- আপনাকে ভাষা নির্বাচন করতে বলবে – ইংরেজী নির্বাচন করে এন্টার দিন ( বাংলা ও ব্যবহার করতে পারেন )
- আপনাকে একটা মেন্যু দিবে এমনঃ
Try ubuntu without any change to your computer
Install Ubuntu - যারা যারা আগেই পার্টিশন করে নিয়ে নিয়েছেন তারা সিলেক্ট করবেন Install Ubuntu আর সোজা চলে যাবে এই টিউটরিয়ালের ইন্সটলেশন অংশে । আর যারা পার্টিশন করেননি তারা সিলেক্ট করবেন Try ubuntu without any change to your computer ।
পার্টিশন করার কাজঃ (Try ubuntu without any change to your computer এর পর থেকে )
Try ubuntu without any change to your computer সিলেক্ট করার পর উবুন্টু লাইভ বুট হবে । এখান থেকে আপনি সব কাজ করতে পারবেন , কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য পার্টিশন করা ।
- বুট হওয়ার পর উবুন্টুর ডেস্কটপ আসবে । সেখানে উপরে থাকা System মেন্যু তে গিয়ে Administration থেকে Partition Editor এ যান ।
নতুন পার্টিশন করার জন্যতো জায়গা দরকার , আর সেটা আসতে হবে আপনার আরেকটা পার্টিশন ভেঙ্গেই ! আগে পার্টিশন ভেঙ্গে নেই …
(পার্টিশন তিন রকমঃ প্রাইমারি , এক্সটেন্ডেড আর লজিক্যাল । উবুন্টুর ইন্সটলের ড্রাইভটা লজিক্যাল হলেও সমস্যা নাই । তাই আমরা কাজের সুবিধার জন্য শেষ পার্টিশন বেছে নিবো , এটাকেই পার্টিশন করব । )
- Partition Editor খুলার পর পার্টিশনের লিস্ট দেখাবে । শেষ পার্টিশনটাতে রাইট বাটন ক্লিক করুন – Resize/Move নামে একটা অপশন পাবেন তাতে ক্লিক করুন । রিসাইজের উইন্ডো আসবে ।
- এখানে ড্রাইভের এরোকে বামে টেনে প্রয়োজনমত কমিয়ে নিন , অথবা Free Space Following এ যতটুকু স্পেস কমাতে চান তা দিন । আমাদের দরকার ১০+১ = ১১ জিবি = ১১২৬৪ এম বি । এতটুকু কমিয়ে নিন । Resize/Move এ ক্লিক করে রিসাইজ করে নিন ।
- এবার আমাদের খালি যায়গা ব্যবহার করে দুইটা নতুন পার্টিশন করব । খালি যায়গায় রাইট বাটন ক্লিক করে New এ ক্লিক করুন । নতুন পার্টিশন করার উইন্ডো আসবে ।
- এখানে ডিফল্ট ভাবে পুরো স্পেস ( ১১ জিবি ) থাকে , টেনে ডানদিকে ১ জিবি খালি করুন বা Free space Following এ ১ জিবি = ১০২৪ মেগা করে নিন ।
Create as এ Logical Partition থাকবে – পরিবর্তনের দরকার নেই ।
File System থেকে ext3 সিলেক্ট করুন ।
Add বাটনে ক্লিক করে পার্টিশনটা এড করে নিন ।
- বাকি খালি যায়গায় আবার উপরের মত নতুন পার্টিশন করুন । এখানে প্যারামিটার কিছু পরিবর্তন হবেঃ
- Create as এ Logical সিলেক্ট করে নিন ।
- File System এ সিলেক্ট করুন swap ।
- Add বাটনে ক্লিক করে পার্টিশনটা যোগ করে দিন । ব্যস ! আমাদের পার্টিশনের কাজ শেষ!
উবুন্টু ইন্সটলেশনঃ
আশা করি আপনার এখন দুইটা পার্টিশন আছে । একটা ১০ জিবির ext3 পার্টিশন আরেকটা ১ জিবির swap . চলুন ইন্সটল করে নেই । যারা উবুন্টুতে পার্টিশন করেছেন তারা ডেস্কটপে থাকা “install” বাটনে ক্লিক কঅরে ইন্সটল চালু করেন । আর যারা উইন্ডোসে পার্টীশন করে “Install Ubuntu” দিয়েছেন তাদেরতো ইতোমধ্যে চালু হয়েই গিয়েছে ।
- প্রথম উইন্ডোটা Location এর । Region এ সিলেক্ট করুন Asia … City এ সিলেক্ট করুন Dhaka । ( ধরে নিচ্ছি আপনি বাংলাদেশে এবং টাইম জোন ঢাকা , এখানে চিটাগাং ও পাবেন ! )
Forward দিন ।
- আপনাকে ভাষা নির্বাচন করতে বলবে । ইংরেজী নির্বাচন করুন – বাংলা ব্যবহার করলে প্রথম বার উল্টা-পাল্টা লাগতে পারে ! Forward দিন ।
- এর পর পাবেন Keyboard Layout । USA সাজেস্ট করা আছে । সেটাই রেখে দিন । ইচ্ছা করলে বাংলাদেশের কি-বোর্ডও ব্যবহার করতে পারেন । Forward দিন । পার্টিশন ম্যানেজার খুলবে । ধাপটা একটু সাবধানে করবেন ।
- আপনাকে চারটা আপশন দিবে ( যদি উইন্ডোস আগে থেকেই থাকে )
- Install them side , choosing between them all startup . ( এই অপশনে হার্ডডিস্ক ২ ভাগ হয়ে যাবে ! )
- Use the entire disk ( পুরো ডিস্ক উবুন্টকে দিয়ে দিবে !! )
- Use the largest continuous space ( সবচেয়ে বড় খালি যায়গা )
- Specify pertition manually ( এটাই আমাদের দরকার । এটা সিলেক্ট করুন) ।
- Forward দিন ।
- সকল পার্টিশনের লিস্ট পাবেন । আমাদের ১০ জিবির পার্টিশনটা বের করে সিলেক্ট করুন । Edit Partition এ ক্লিক করুন । একটা নতুন উইন্ডো পাবেন ।
- Use as এ ext3 না থাকলে ext3 Journaling file system করে দিন ।
- Format the partition এর বক্সে ক্লিক করে দিন ।
- Mount Point এ একটা ব্যাক স্ল্যাশ “/” সিলেক্ট করুন । (ইউনিক্স/লিনাক্স টাইপ সিস্টেমে “/” হল রুট পার্টিশন )
- OK করে বেরিয়ে আসুন ।
যারা উবুন্টুতে পার্টিশন করেছেন আর swap পার্টিশন করেছেন তাদের এটা করার দরকার নাই । যারা উইন্ডোসে করেছেন তাদের ১ জিবির পার্টিশনটা swap করতে হবে ।
- ১ জিবির পার্টিশনটা সিলেক্ট করে Edit Partition এ যান ।
- Use as এ swap area সিলেক্ট করে নিন ।
- Format the partition এর বক্সে ক্লিক করে দিন ।
- OK করে বেরিয়ে আসুন ।
এর পরের ধাপ ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে –
- Whats your name এ আপনার পুরো নাম দিতে পারেন ।
- What name do you want to use to login? এ আপনি যে নাম দিলে লগ-ইন করতে চান তা দিন । সব ছোট হাতের অক্ষরে …
- পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি দুটো ঘরে দুইবার আপনার পাসওয়ার্ড দিন । পাসওয়ার্ড কিন্তু খুবই জরুরী মনে রাখবেন ।
নীচের দুটো অপশন আছে –
- Log in automatically & Require a password to log in . ডিফাল্ট ভাবে Require a password to log in দেয়া থাকে ।
- Log in automatically দিলে স্টার্টের সময় ইউজারনেম পাসওয়ার্ড চাইবে না , সরাসরি উবুন্টু ডেস্কটপ চালু হয়ে যাবে ।
- এর পরের ধাপে ইন্সটলেশন জানতে চাইবে উইন্ডোস থেকে কোণ কিছু ইম্পোর্ট করবে কিনা । এটা আপনার ইচ্ছা ।
- এর পরের ধাপে উবুন্টু ইন্সটলেশনের সময় কি কি পরিবর্তন কঅরতে যাচ্ছে তার একটা সারাংশ দেখাবে । আপনার সিলেক্ট করা দুইটা ডিস্ক ফরম্যাট হচ্ছে কিনা খেয়াল করে দেখে নেবেন ।
Install বাটনে ক্লিক করুন । ইন্সটল শুরু হবে । মোটামুটি ৮ মিনিটের মত সময় লাগবে ইন্সটল হতে । ইন্সটল শেষ হলে আপনাকে ডিস্ক বের করে বলবে রিস্টার্ট দেয়ার জন্য ।
রিস্টার্ট দিয়ে অবশ্যই উবুন্টুতে লগ-ইন করবেন । আমি আবারো বলছি সরাসরি উবুন্টুতে লগ-ইন করবেন উইন্ডোসে না , এসময় উবুন্টু ইন্সটলেশন পরবর্তি কিছু কাজ করে , সেজন্য এটা জরুরী ।
ব্যস! উবুন্টু ইন্সটল হয়ে গেল । স্বাগতম উবুণ্টুর জগতে !!!!
খুবই ভালো হয়েছে। অনেকের কাজে আসবে। অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া …
দারুণ জামাল…
থ্যাংকু … 🙂
খুব সুন্দর এবং সহজ করে লেখা। আমার আজকে রাতেই কাজে লাগবে। ধন্যবাদ, চমৎকার এ লেখার জন্য। 😀
ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂
কিন্তু যদি লিনাক্স মিন্ট ইনস্টল করি তবে Partition করার জন্য System-Administration-Partition Editor কোথায় পাব। লিনাক্স মিন্টে তো উপরের দিকে সিস্টেম বলে কিছু থাকে না। আর লিনাক্স মিন্টে কি Partition করার সব কাজ উবুন্টুর মতো একি রকম থাকবে?
এটা পাবেন Menu -> Control Center এ , নতুবা Menu -> All Application -> Administration -> Gparted …
হুম! আর বাকি সব স্টেপ একদম একরকম 🙂
সব সময় পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ 😀 , এখন তাহলে শুরু করি! (কারেন্ট আবার কখন যায় সে ভয়েই আছি)
পুরানো পোষ্ট দেখছিলাম , এই কমেন্টটা কখন যে করলেন টেরই পেলাম না ! 🙂
হুম ভাল !! এর আগে টেকটিউনস এ পরে ছিলাম ।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য । অনেক আগে এটা লিখেছিলাম … পরে টেকটিউনসে আবার লিখি ।
ভালো থাকবেন ।
[…] কমপ্লিট করুন । সাহায্যের জন্য এটা দেখতে পারেন […]
ভাই, দারুন পোস্টের জন্য ধন্যবাদ, এভাবে কি উবুন্টূ ১১।০৪ ও ইন্সটল করা যাবে???
উবুন্টু ১১.০৪ এ বিষয়টা এমনই তবে ইন্টারফেসে একটু পার্থক্য পাবেন । আসলে ইন্সটলের কী-পয়েন্ট হল ম্যানুয়ালি পার্টিশন সিলেক্ট করা এবং রুট পার্টিশন সেট করা ।
ভাল থাকবেন ।