উপদংশ অরফে সর্দিনামা

সর্দি ! শব্দটা কোথা থেকে আসল জানার খুব ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু আপাতত ধারে কাছে কোন বাংলা ডিকশনারি নেই । তবে একটা জিনিস জেনে রাখুন, ঠান্ডা লেগেছে বললে কিন্তু হবে না ! ঠান্ডার সময়ে সর্দি ধরলে বলতে হবে সর্দি আর গরমের সময়ে সর্দি হলে তাকে বলতে হবে গরমি অথবা গর্মি , আর মাঝে মাঝে ফেসবুকে ভাব নেবার জন্য আমার মত উপদংশ শব্দটাও ব্যবহার করে দেখতে পারেন ।

কেমন করে সর্দির মত এত তুচ্ছ একটা রোগ বারবার ফিরে আসে তা প্রথম জেনেছিলাম এক মামার কাছ থেকে , অতি অল্প বয়সে । পরে আরো বিস্তারিত জানলাম ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের একটুখানি বিজ্ঞান বই পড়ার সময় , সেদিন James Mays এর ডকুমেন্টারি Things you need to know দেখতে গিয়ে দেখি সেখানেও এই সর্দি নিয়ে অনেকক্ষণ কথাবার্তা ! যারা কারণটা জানেন না তাদের বলছি, আমাদের শরীর তার কাছে চেনা ভাইরাস বা জীবানু প্রতিহত করার ক্ষমতা রাখে, তাই একবার কোন ভাইরাসঘটিত রোগ হয়ে তা সেরে গেলে সাধরনত আর হয় না , যেমন ধরুন, বসন্ত । সর্দি জীবানোর বেলায় একটা মজার ঘটনা ঘটে – যখনই জীবানুটা এক শরীর থেকে আরেক শরীরে ছড়ায় তখনই কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে যায় । ফলে আজ আপনির শরীর যে সর্দির জীবানুর জন্য সুরক্ষা তৈরি করে রেখেছে সেই জীবানুই আরেক রুপে মাস ছয়েকের মধ্যেই আপনার কাছে পৌছাবে – সেই ছদ্মবেশী জীবানুকে আপনার সেনাবাহিনীর পক্ষে আর আটকানো সম্ভব হয়না । তাই সাধারণত দেখা যায় একবার সর্দি হওয়ার পর আবার আক্রান্ত হতে আরো বেশ কিছুদিন সময় লাগে – সাধারণত সেটা ৬ মাসের মত ।

বুঝা গেল সর্দি হল এক অমোঘ নিয়তির মত, সর্দি হবেই হবে । কথা হচ্ছে সর্দি হয়ে গেলে কী করবেন ? সর্দি হলে অনেকেই ঘচাৎ করে একগাদা ওষুদ গিলে ফেলেন, এন্টিবায়োটিক খেয়ে টেয়ে একদম অস্থির অবস্থা যাকে বলে – ভুলেও সে কাজটি করবেন না । জানেন তো মুজতবা আলির ভাষ্যে – ওষুধ খেলে সর্দি সারে এক সপ্তাহে আর না খেলে সারে ৭ দিনে । আমি ডাক্তার না, তাই ওষুধ খেয়ে মাথা ভার করে এক সপ্তাহ পড়ে থাকার চেয়ে সর্দি নিয়ে এক সপ্তাহ কাটানোই আমার কাছে ভালো মনে হয় । সর্দির সময়ে বেশি করে পানি খাবেন, লেবু বা ভাইটামিন ( ভিটামিন একটি ভুল উচ্চারণ এবং ব্যবহার ) সি যুক্ত ফল খাবেন । বেশি করে ঘুমাবেন – এটাই সবচেয়ে বড় ঔষধ । তবে খেয়াল রাখবেন, সর্দি আবার গলায় যেনো জমে না থাকে , তাহলে কিন্তু আবার কাশির সাথে মোলাকাত হবে [১]

এবার ব্যক্তিগত প্রসংগে আসি, দুই দিন ধরে সর্দিতে ভুগছি । আমার সর্দিতে তেমন কোন সমস্যা হয়না , টপটপ করে পড়া পানির মাঝেও আমি আমার কাজ চালিয়ে যেতে পারি । তবে সমস্যা অন্য যায়গায় , সাধারণত যখন আমি বইপত্র নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করি, পড়াশোনার পরিমান বাড়িয়ে দেই সেই সময়টাই ভিন্ন ধরনের একটা সর্দি আমার দেখা দেয় – এই সর্দি হঠাৎ করে শুরু হয় , হঠাৎ করে শেষ , কোন মিডিল স্টেজের বালাই নেই । একনাগাড়ে ৫-৬ দিন নাক দিয়ে অবিরাম পানি পড়ে, নাকে সুড়সুড়ির কারণে হাচি দেই, লিখতে গেলে কাগজপত্র ভিজিয়ে অস্থির অবস্থার তৈরি করি , ৬-৭ দিনের দিন হঠাৎ সকাল বেলা আবিস্কার করি সর্দি শেষ ! এই অদ্ভুত সর্দির কারণটা কী আর পড়াশোনার সাথে এর যোগসুত্রই বা কী আমি খুজে বের করার চেষ্টা করছি … মনে হয় গাড়ির ইন্জিনের রেডিয়েটরের মত ঠান্ডা রাখার কোন প্রসেস 🙂

বাবা, সর্দি কাশি তোমরা বেচে থাকো[২] 🙂

[১] সর্দি হলেই কাশি হয় বলে সাধারণত সর্দি-কাশি বলেই রোগটাকে বলা হয় । সেই কাশির কারণটা হল গলায় যাওয়া সর্দি বা স্লেষ্মা ।
[২] সর্দির সাথে সাইনুসাইটিসকে মিলিয়ে ফেলবেন না ; সাইনুসাইটিস রুগি সাধারণত নিজের সর্দি গন্ধ পায় অন্যদিকে সর্দিতে আক্রান্ত ব্যক্তি কোন গন্ধই পায় না ।
[৩] লেখাটা সর্দির মতই তরল এবং আগোছালো … সর্দি নিয়ে লিখছি বলেই হয়ত ।

4 comments on “উপদংশ অরফে সর্দিনামা

  1. maq বলেছেন:

    ১।
    সর্দি দশার শেষের দিকে যখন সর্দি ঘন হয়ে নাকের কাছে আটকে থাকে, তখন নাক দিয়ে খুব জোরে নিঃশ্বাস ফেলে সর্দিটাকে ফেলে দিলে, নাকটা বেশ হালকা লাগে, মনে হয় মাথাটাও ভারমুক্ত হয়ে যেন খুলে যায় – সেই সময়টা বেশ ভাল লাগে। 🙂

    ২।
    সর্দি বা ঠান্ডা লাগলে কমলা বা কমলার রস বেশ কার্যকরী, শরীরের অবসন্ন ভাবটা কেটে গিয়ে শরীরটা বেশ ভাল লাগে। তবে লেবু খেলে আমার জন্য হিতে বিপরীত হয়ে যায়। 😦

    ৩।

    সর্দির সময়ে বেশি করে পানি খাবেন, লেবু বা ভাইটামিন ( ভিটামিন একটি ভুল উচ্চারণ এবং ব্যবহার ) সি যুক্ত ফল খাবেন ।

    আসলে ঝামেলা হয় আমেরিকান আর ব্রিটিশ উচ্চারণ নিয়ে। আমেরিকানরা বলে ভাইটামিন আর ব্রিটিশরা বলে ভিটামিন। একইভাবে either শব্দটাকে ব্রিটিশরা বলে ইদার, আর আমেরিকানরা বলে আইদার। এরকম আরো আছে। তবে আমেরিকানরা সব কিছুকেই একটু ঘোড়েল করে উপস্থাপন করতে পছন্দ করে। যেমন লিনাক্স না বলে আমেরিকানরা বলে লাইনাক্স, উবুন্টুকে বলে ইউবান্টু! মোদ্দা কথা হচ্ছে ভিটামিন/ভাইটামিন – দুটোই সঠিক! 🙂

    • Jamal Uddin বলেছেন:

      ১. কড়া টাইপের একটা সর্দি হলে ঐ মুহুর্তটাতে আসলেই অনেক অনেক ভালো লাগে । অনেকদিন ধরে সেই অভিজ্ঞতা হচ্ছে না, সারাক্ষণ পানি পড়ছে – তারপর একসময় কথা নেই বার্তা নেই সর্দি শেষ !
      ২. লেবু জাতীয় ফল বললে ভালো হত , সবগুলোই একসাথে কাভার করা যেত ( ভাষা ব্যবহারের দক্ষতাগত ভুল ) 🙂
      ৩. একটা ভুল জানার হাত থেকে রক্ষা পেলাম ! তবে আমি মাঝে মাঝে বুঝে পাইনা বাংলাদেশে কোনটা প্রেফার করা হয় , কোথাও দেখি আমেরিকান , কোথাও ব্রিটিশ আর কখনও কখনও খাস বাংলাদেশি ( যেমন শিডিউল ) . যেকোন একটা ফলো করলে ভালো হত । ভাইটামিন বললে ক্লাসের ছেলেপেলে হাসে আর ভিটামিন বললে স্যার ধমক দেন – বাংলাদেশের স্কুলগুলোতে জিনিসটা একদম ভজঘট পাকিয়ে গেছে ।

      অ.ট. আপনার কুবুন্টু কেমন চলছে ? ১১.১০ এর জন্য অপেক্ষা করতে করতে আর ভাল লাগছে না , সত্যি বলতে ১০.০৪ এ হাপিয়ে উঠেছি । যদিও এখন পর্যন্ত আ্মার ফেভারিট উবুন্টু ভার্সন ঐটাই ।

      • maq বলেছেন:

        কুবুন্টু ভালোই চলছে, বেশিরভাগ সময়ে কুবুন্টুতেই থাকা হয়। আমি অবশ্য একেবারে ১২.০৪ এ বদল করব, তার আগ পর্যন্ত ডেস্কটপে কুবুনটু ১১.০৪ আর ল্যাপটপে ১০.০৪ ই থাকবে ইনশাল্লাহ (আসলে বার বার বদল করতে ভালো লাগেনা 😛 )।

  2. তারেক বলেছেন:

    হায়রে সর্দি , আমার লাইফে এই এক সর্দি ছাড়া আর অন্য কোন শারীরিক দুঃখ কষ্ট নাই । সারা বছর ঠিক , শুধু শীতকাল পুরোটা সর্দি মৌসুম । কি যে যাতনা ,সহে না বেদনা , আসিতেছে আবারো শীতকাল , করিয়া উঠিব শীৎকার !!!
    😥

তারেক এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল